অপকারিতা (Disadvantages):
১। ভাইরাস মানবদেহে বসন্ত, হাম, পোলিও, জলাতঙ্ক, ইনফ্লুয়েঞ্জা, হার্পিস, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, ভাইরাল হেপাটাইটিস, ক্যাপোসি সার্কোমা প্রভৃতি মারাত্মক রোগ সৃষ্টি করে থাকে।
২। বিভিন্ন উদ্ভিদের রোগ সৃষ্টিতে যেমন-সিমের মোজাইক রোগ, আলুর লিফরোল (পাতা কুঁচকাইয়া যাওয়া), পেঁপের লিফকার্ল, ক্লোরোসিস, ধানের টুংরো রোগসহ প্রায় ৩০০ উদ্ভিদ রোগ ভাইরাস দ্বারা ঘটে থাকে। এতে ফসলের উৎপাদন বিপুলভাবে হ্রাস পায়।
৩। গরুর বসন্ত; গরু, ভেড়া, ছাগল, শূকর, মহিষ ইত্যাদি প্রাণীর ‘ফুট এ্যান্ড মাউথ’ রোগ অর্থাৎ এদের পা ও মুখের বিশেষ ক্ষতরোগ (খুরারোগ) এবং মানুষ, কুকুর ও বিড়ালের দেহে জলাতঙ্ক (hydrophobia) রোগ ভাইরাস দিয়েই সৃষ্টি হয়।
৪। ফায ভাইরাস মানুষের কিছু উপকারী ব্যাকটেরিয়াকেও ধ্বংস করে থাকে।
৫। HIV ভাইরাস দিয়ে AIDS হয়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।
৬। Ebola ভাইরাসের আক্রমণে cell lysis হয় বা কোষ ফেটে যায়।
৭। Zika ভাইরাস মশকীর মাধ্যমে ছড়ায়। মাইক্রোসেফালি ঘটে অর্থাৎ অপরিণত মস্তিষ্ক নিয়ে শিশু জন্মায়। ডেঙ্গুর মত লক্ষণ দেখা যায়।
৮। নিপা ভাইরাস Paramyxoviridae পরিবারভুক্ত একটি RNA ভাইরাস যার গণ নাম Henipavirus. ১৯৯৯ সালে মালয়েশিয়ায় শূকরের খামারে প্রথম ধরা পড়লেও দ্রুত দক্ষিণ এশিয়ায় ছড়িয়ে পরে। বাদুর এই ভাইরাসটির বাহক এবং কাঁচা খেজুরের রসের মাধ্যমে এ ভাইরাস মানবদেহে সংক্রমিত (অনুপ্রবেশ) হয়। এ ভাইরাসের আক্রমণে শ্বসন জটিলতায় মানুষসহ গৃহপালিত পশুপাখির মৃত্যু ঘটে।
৯। সম্প্রতি SARS (Severe Acute Respiratory Syndrome) ভাইরাসের কারণে চীন, তাইওয়ান, কানাডা প্রভৃতি দেশে বহু লোকের মৃত্যু হয়েছে। MERS (Middle East Respiratory Syndrome) ভাইরাসও একটি মারাত্মক ভাইরাস।
১০। বার্ড ফ্লু-একটি ভাইরাসজনিত রোগ। ২০০৮ সালে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে বার্ড ফ্লু মহামারী আকারে হয়েছিল। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রতি বছরই হাজার হাজার মুরগি এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। অ্যাভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা
H5N1 (Hemaglutinin types-5-Neuraminidase type-1) ভাইরাসের আক্রমণে হাঁস-মুরগিতে বার্ড ফ্লু নামক মারাত্মক রোগের সৃষ্টি হয় যা পোল্ট্রি শিল্পকে ধ্বংস করে।
১১। সোয়াইন ফ্লু- Swine Influenza virus (SIV) দ্বারা সৃষ্টি হয়। ২০০৯ সালের এপ্রিল মাসে সোয়াইন ফ্লু শনাক্ত করা হয়। ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের Subtype
H5N1 ও H1N1 (Hemaglutinin type-1-Neuraminidase type-1) এর কারণে এই ফ্লু ঘটে থাকে। এ ভাইরাস দ্বারা মানুষ ও শূকর আক্রান্ত হয়। ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসেই ভারতে বহু লোক (২১০০) মারা যায় এবং ৩৪,০০০ মানুষ আক্রান্ত হয়। বিশ্বায়নের যুগে এ রোগের দ্রুত বিস্তার ঘটেছে মেক্সিকো থেকে সারাবিশ্বে।
১২। হেপাটাইটিস-বি ভাইরাস দিয়ে মানুষের লিভার ক্যান্সার, পেপিলোমা ভাইরাস দিয়ে এনোজেনিটাল (জরায়ুর মুখ) ক্যান্সার, হার্পিস সিমপ্লেক্স দিয়ে ক্যাপোসি সার্কোমা ইত্যাদি মারাত্মক রোগ হয়ে থাকে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
১৩। মানুষের অসুস্থ হওয়ার একটি সাধারণ কারণ হলো সর্দিজ্বর (common cold)। বিভিন্ন প্রকৃতির অনেকগুলো ভাইরাস এর জন্য দায়ী; তাই এর জন্য কোনো ভ্যাকসিন তৈরি করা সম্ভব হয়নি।
১৪। চিকুনগুনিয়া ভাইরাস এর আক্রমণে উচ্চজ্বর, জয়েন্টে ব্যাথা, শরীরে রেশ ওঠা, মাথা ব্যাথা, দুর্বলতা ইত্যাদি লক্ষণ দেখা যায়।
১৫। হিউম্যান হার্পিস ভাইরাসেসঃ এটি Rhadino গণের এবং DNA ভাইরাস। এর দ্বারা ক্যাপোসি সারকোমা (HIV সম্পর্কিত রোগীদের ত্বক ক্যান্সার) রোগ হয়।
উপকারিতা (Advantages):
১। বসন্ত, পোলিও, প্লেগ এবং জলাতঙ্ক রোগের প্রতিষেধক টিকা ভাইরাস দিয়েই তৈরি করা হয়।
২। ভাইরাস হতে ‘জন্ডিস’ রোগের টিকা তৈরি করা হয়।
৩। কলেরা, টাইফয়েড, আমাশয় ইত্যাদি রোগের ওষুধ তৈরিতে ব্যাকটেরিওফায ভাইরাস ব্যবহার করা হয়।
৪। ভাইরাসকে বর্তমানে বহুল আলোচিত ‘জেনেটিক প্রকৌশল’-এ বাহক হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
৫। ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া নিয়ন্ত্রণে ভাইরাস ব্যবহার করা হয়।
৬। কতিপয় ক্ষতিকারক কীটপতঙ্গ দমনেও ভাইরাসের ভূমিকা উল্লেখ করার মতো। যুক্তরাষ্ট্রে NPV (Nuclear polyhydrosis Virus) কে কীট পতঙ্গনাশক হিসেবে প্রয়োগ করা হয়।
৭। ফাজ ভাইরাস ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগের হাত থেকে মানুষকে রক্ষা করে থাকে।
৮। লাল টিউলিপ ফুলে ভাইরাস আক্রমণের ফলে লম্বা লম্বা সাদা সাদা দাগ পড়ে। একে ব্রোকেন টিউলিপ বলে। এর ফলে ফুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায় এবং ফুলের মূল্য বেড়ে যায়।
৯। অস্ট্রেলিয়ার খরগোসের সংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় ফসলের চরম ক্ষতি হচ্ছিল। Myxovirus-এর সাহায্যে খরগোস নিধন করে তাদের সংখ্যা কমানো হয়েছে।